গুণনীয়ক বা উৎপাদক: কোনো একটি সংখ্যা যে সংখ্যা দ্বারা সম্পূর্ণভাবে বিভাজ্য হয় যেই ভাজক সংখ্যাটিকে ওই সংখ্যার গুণনীয়ক বা উৎপাদন (factor or divisor) বলে।
উদাহরণ: 15 – এর উৎপাদকগুলি হল-1,3,5,15। 24 – এর উৎপাদকগুলি হল- 1,2,3,4,6,8,12,24।
মৌলিক গুণনীয়ক বা মৌলিক উৎপাদক: কোনো সংখ্যার যে যে উৎপাদকগুলি মৌলিক সংখ্যা, সেই উৎপাদকগুলিকে ওই সংখ্যার মৌলিক গুণনীয়ক বা মৌলিক উৎপাদন (prime factor)বলে।
উদাহরণ: 15-এর মৌলিক উৎপাদক দুটি হল- 3 ও 5, 24-এর মৌলিক উৎপাদক দুটি হল- 2,3।
সাধারণ গুণনীয়ক বা সাধারণ উৎপাদক: যদি কোনো একটি সংখ্যা দ্বারা দুই বা ততোধিক সংখ্যা সম্পূর্ণভাবে বিভাজ্য হয় তবে প্রথমোক্ত সংখ্যাটিকে শেষোক্ত দুই বা ততোধিক সংখ্যাগুলির সাধারণ গুণনীয়ক বা সাধারণ উৎপাদক (common factor or common division) বলে।
উদাহরণ: 2 দ্বারা 6, 8, 12 সংখ্যাগুলি বিভাজ্য। সুতরাং, 6, 8, 12-এর সাধারণ উৎপাদক 2।
3 দ্বারা 6, 18, 24 সংখ্যাগুলি বিভাজ্য। সুতরাং, 6, 18, 24 সংখ্যাগুলির সাধারণ উৎপাদক 3।
পরস্পর মৌলিক সংখ্যা: যদি দুটি সংখ্যার কোনো সাধারণ গুণনীয়ক বা উৎপাদক না থাকে অথবা তাদের একমায় সাধারণ উৎপাদকটি1 হয়, তখন ঔই সংখ্যা দুটিকে পরস্পর মৌলিক সংখ্যা (prime to each other) বলে।
উদাহরণ: 2 ও 3 পরস্পর মৌলিক সংখ্যা। 5 ও11 পরস্পর মৌলিক সংখ্যা।
গরিষ্ঠ সাধারণ গুণনীয়ক (গসাগু): কয়েকটি সংখ্যার সাধারণ গুণনীয়ক বা উৎপাদকগুলির মধ্যে যেটি গরিষ্ঠ (অর্থাদ সর্বাপেক্ষা বড়ো), তাকে ওই সংখ্যাগুলির গরিষ্ঠ সাধারণ গুণনীয়ক (highest common factor) বা সংক্ষেপে গসাগু (HCF) বলে।
উদাহরণ: 15 ও 24 সংখ্যা দুটির সাধারণ গুণনীয়ক দুটি হল 1 এবং 3; এবং এদের মধ্যে বৃহত্তম 3। সুতরাং 15 ও 24 -এর গসাগু = 3
12 -এর উৎপাদকগুলি-1, 2, 3, 4, 6, 12; 30-এর উৎপাদকগুলি-1, 2, 3, 5, 6, 10, 15,30 সাধারণ উৎপাদকগুলি-1, 2, 3, 6 যাদের মধ্যে বৃহত্তম 6।
12 ও 30 -এর গসাগু = 6।
*গসাগু নির্ণয়ের বিভিন্ন পদ্ধতি:
১. প্রদত্ত প্রতিটি সংখ্যাকে তাদের মৌলিক উৎপাদকের গুণফলে প্রকাশ করতে হবে।
২. সাধারণ উৎপাদকগুলি নির্ণয় করতে হবে।
৩. এই সাধারণ উৎপাদকগুলির গুণফলই নির্ণেয় গসাগু।
উদাহরণ: 30, 70 এবং 385-এর গসাগু নির্ণয় করো।
সমাধান: 30 = 1×2×3×5, 70 = 1×2×5×7, 385 = 1×5×7×11
প্রদত্ত সংখ্যাগুলির সাধারণ গুণনীয়ক বা উৎপাদক 1,5।
নির্ণেয় গসাণু = 1×5 =5।
ভাগ পদ্ধতিতে গসাগু নির্ণয়:
প্রদত্ত সংখ্যাগুলি বড়ো হলে, তাদের মৌলিক উৎপাদকগুলি সহজে নির্ণয় করা যায় না। তখন প্রদত্ত সংখ্যাগুলির গসাগু ভাগ পদ্ধতিতে নির্ণয় করা হয়। পদ্ধতিটি নিম্নরূপ-
(১) দুটি সংখ্যার গসাগু নির্ণয় পদ্ধতি:
(ক) দৃষ্টি সংখ্যার গসাগু নির্ণয় করার জন্য বড়ো সংখ্যাটিকে ছোটো সংখ্যা দ্বারা ভাগ করতে হবে।।
(খ) যদি কোনো ভাগশেষ না থাকে তবে ছোটো সংখ্যাটি অর্থাৎ ভাজকাট প্রদত্ত সংখ্যা দুটির গসাগু হবে।
(গ) যদি ভাগশেষ থাকে তখন ভাগশেষকে ভাজক ধরে এবং ছোটো সংখ্যাটিকে ভাজ্য ধরে ভাগ করতে হবে।
(ঘ) যদি কোনো ভাগশেষ না থাকে তবে দ্বিতীয় ভাজক (অর্থাৎ ভাগশেষটি) প্রদত্ত সংখ্যা দুটির গসাগু হবে।
(ঙ) যদি ভাগশেষ থাকে তবে দ্বিতীয় ভাগশেষকে ভাজক ধরে এবং দ্বিতীয় ভাজককে ভাজ্য ধরে ভাগ করতে হবে।
(চ) যদি কোনো ভাগশেষ না থাকে তবে দ্বিতীয় ভাগশেষটি প্রদত্ত সংখ্যা দুটির গসাগু হবে।
(ছ) যদি ভাগশেষ থাকে তবে পদ্ধতিটি ততক্ষণ সম্পাদন করতে হবে যতক্ষণ কোনো ভাগশেষ অবশিষ্ট না থাকে।
(জ) শেষ ভাজকটিই হবে প্রদত্ত সংখ্যা দুটির গসাগু।
(২) তিন বা ততোধিক সংখ্যার গসাগু নির্ণয় পদ্ধতি:
(ক) ওপরের পদ্ধতি অনুযায়ী প্রথমে যে-কোনো দুটি সংখ্যার গসাগু নির্ণয় করতে হবে।
(খ) তারপর এই গসাগুর সাথে তৃতীয় সংখ্যার গসাগু ওপরের পদ্ধতি অনুযায়ী নির্ণয় করতে হবে।
(গ) এই গসাগুটিই হল, প্রদত্ত সংখ্যা তিনটির গসাগু।
(ঘ) চারটি সংখ্যা দেওয়া হলে প্রথম তিনটির গসাগুর সাথে চতুর্থ সংখ্যার গসাগু নির্ণয় করতে হবে।
*গসাগু নির্ণয়ের সংক্ষিপ্ত এবং সহজ পদ্ধতি:
(ক) যে সংখ্যাগুলির গসাগু নির্ণয় করতে হবে সেই সংখ্যাগুলির মাঝে ‘কমা’ দিয়ে একটির পাশে আর-একটি বসাতে হবে।
(খ) তারপর যে মৌলিক সংখ্যা দ্বারা সকল সংখ্যাগুলিই বিভাজ্য সেটি দিয়ে সংখ্যাগুলিকে ভাগ করে ভাগফল পরপর নীচে বসাতে হবে।
(গ) আবার প্রতিটি ভাগফল যে মৌলিক সংখ্যা দ্বারা বিভাজ্য তা দিয়ে ভাগ করে ভাগফলগুলি পরপর নীচে বসাতে হবে।
(ঘ) এইভাবে পরপর ভাগ করে যেতে হবে। যখন ভাগফলগুলির আর কোনো সাধারণ মৌলিক গুণনীয়ক বা উৎপাদক থাকবে না তখন ভাগের কাজ বন্ধ করা হবে।
(ঙ) ভাজক মৌলিক সংখ্যাগুলির গুনফলই হবে প্রদত্ত সংখ্যাগুলির গসাগু।
*মিশ্র রাশির গসাগু নির্ণয়ের পদ্ধতি:
(ক) দুই বা ততোধিক মিশ্র রাশির গসাগু নির্ণয় করতে হলে রাশিগুলিকে একজাতীয় এককে পরিণত করতে হবে।
(খ) তারপর রাশিগুলির গসাগু নির্ণয় করতে হবে।
(গ) প্রদত্ত রাশিগুলিকে যে এককে পরিণত করা হয়েছে, গসাগু সেই একই এককের হবে।
(ঘ) প্রয়োজনে গসাগুটিকে প্রদত্ত মিশ্র রাশির এককে পরিণত করে নিতে হবে।
*গুণিতক: যদি কোনো সংখ্যা অপর একটি সংখ্যা দ্বারা সম্পূর্ণরূণে বিভাজ্য হয়, তবে ভাজ্যকে ভাজকের গুণিতক (multiple) বলা হয়।
*সাধারণ গুণিতক: যাদি দুই বা ততোধিক সংখ্যার গুণিতকগুলি নির্ণয় করে দ্যাখা যায় যে, গুণিতকগুলির মধ্যে এক বা একাধিক গুণিতক সাধারণ (common) ভাবে আছে তাহলে ওই গুণিতকটিকে বা গুণিতকগুলিকে প্রদত্ত সংখ্যাগুলির সাধারণ গুণিতক (comman multiple) বলে।
*লঘিষ্ঠ সাধারণ গুণিতক বা লসাগু:
দুই বা ততোধিক সংখ্যার সাধারণ গুণিতকগুলির মধ্যে যে গুণিতকটি ক্ষুদ্রতম (লঘিষ্ঠ বা least), তাকে প্রদত্ত সংখ্যাগুলির লঘিষ্ঠ সাধারণ গুণিতক (least common multiple) বা সংক্ষেপে লসাগু (LCM) বলে।
*লসাগু নির্ণয়ের বিভিন্ন পদ্ধতি: উৎপাদক বা গুণনীয়কের সাহায্যে লসাগু নির্ণয়
(ক) প্রদত্ত প্রতিটি সংখ্যাকে তাদের মৌলিক উৎপাদকের গুণফলে প্রকাশ করতে হবে।
(খ) সর্বোচ্চ ঘাতযুক্ত মৌলিক উৎপাদকগুলির গুণফল নির্ণয় করতে হবে।
(গ) এই গুণফলই প্রদত্ত সংখ্যাগুলির লসাগু।
*মিশ্র রাশির লসাগু নির্ণয়ের পদ্ধতি:
(ক) এই পদ্ধতিটি মিশ্র রাশির গসাগু নির্ণয় পদ্ধতির অনুরূপ।
(খ) মৌলিক উৎপাদকগুলির গুণফলই নির্ণেয় লসাগু।
(গ) যে এককে প্রদত্ত রাশিগুলিকে পরিণত করা হয়েছে লসাগু সেই একই এককে হবে।
(ঘ) প্রয়োজনে লসাগুটিকে প্রদত্ত মিশ্র রাশির এককে পরিণত করা হবে।
*ভগ্নাংশের গুণনীয়ক: যদি একটি ভগ্নাংশ অপর একটি ভগ্নাংশ দ্বারা সম্পূর্ণরূপে বিভাজ্য হয় অর্থাৎ যদি একটি ভগ্নাংশ কে অপর একটি ভগ্নাংশ দ্বারা ভাগ করলে ভাগফল একটি পূর্ণসংখ্যা হয় তবে দ্বিতীয় ভগ্নাংশ (ভাজক) কে প্রথম ভগ্নাংশ (ভাজ্য) টির গুণনীয়ক বলে ।
*ভগ্নাংশের গুণনীয়ক নির্ণয় করার পদ্ধতি:
(ক) গুণনীয়ক ভগ্নাংশটি এমন হবে যা দিয়ে প্রদত্ত ভগ্নাংশটিকে ভাগ করলে ভাগফল একটি পূর্ণসংখ্যা হবে।
(খ) গুণনীয়ক ভগ্নাংশটির লব, প্রদত্ত ভগ্নাংশের লবের একটি গুণনীয়ক হবে।
(গ) গুণনীয়ক ভগ্নাংশটির হর, প্রদত্ত ভগ্নাংশের হরের একটি গুণিতক হবে।অর্থাৎ বলা যায় যে, কোনো ভগ্নাংশের গুণনীয়ক অসংখ্য।
Q. দুটি সংখ্যার গসাগু 2 এবং তাদের লসাগু 70 হলে, সংখ্যা দুটি কী কী? [CDS 1999]
(a) 14, 10
(b) 2, 35
(c) 6, 70
(d) 4, 70
Answer – (a) 14, 10
সমাধান – দুটি সংখ্যার গুণফল = সংখ্যা দুটির লসাগু × গসাগু
প্রদত্ত, লসাগু = 70, গসাগু = 2
এখন, 70 × 2 = 140 = 14×10 ।
সংখ্যা দুটি 14 এবং 10 ।
Q. দুটি সংখ্যার সমষ্টি 1000 এবং তাদের লসাগু 8919 হলে, সংখ্যা দুটি কী কী? [CDS 1999]
(a) 993, 7
(b) 989, 11
(c) 987, 13
(d) 991, 9
Answer – (d) 991, 9
সমাধান – সংখ্যা দুটির সমষ্টি = 1000, লসাগু = 8919
এখন, 991× 9 = 8919 এবং 991+9 = 1000 ।অর্থাৎ সংখ্যা দুটি 991, 9।
Q. 0 ও 10000-এর মধ্যবর্তী কতগুলি সংখ্যা 21, 35, 63 দ্বারা বিভাজ্য? [ Bank P.O 2008 ]
(a) 32
(b) 34
(c) 30
(d) 31
Answer – (d) 31
সমাধান – 21,35,63-এর লসাগু = 315
এখন, চার অঙ্কের বৃহত্তম সংখ্যা = 9999 এবং 9999 = (315×31)+234। অর্থাৎ 0 ও 10000 -এর মধ্যবর্তী সংখ্যা 21, 35, 63 দ্বারা বিভাজ্য।
Q. বৃহত্তম কোন্ সংখ্যাকে 5834 থেকে বিয়োগ করলে বিয়োগফলটি 20, 28, 32 এবং 35 দ্বারা বিভাজ্য হবে? [SSC CGL, pre exam 2010]
(a) 1120
(b) 4714
(c) 5200
(d) 5600
Answer – (b) 4714
সমাধান – 20,28,32 এবং 35 -এর লসাগু 1120। বৃহত্তম সংখ্যা= 5834 – 1120 = 4714
LCM and HCF Questions for SSC,CGL Exam
Q. ক্ষুদ্রতম পূর্ণবর্গ সংখ্যা নির্ণয় করো, যা যথাক্রমে 21,36 এবং 66 দ্বারা বিভাজ্য। [SSC CGL TIER-1 Exam 2012]
(a) 213444
(b) 254016
(c) 156816
(d) 186624
Answer – (a) 213444
সমাধান – 21,36 এবং 66 -এর লসাগু = 2² x 3² x 7 x 11 = 2772।
নির্ণেয় সংখ্যা = 2772×7×11 = 213444
Q. তিনটি সংখ্যার গসাগু ও লসাগু যথাক্রমে 6 এবং 420। দুটি সংখ্যা যথাক্রমে 12 এবং 30 হলে, তৃতীয় সংখ্যাটি হল- [WBCS (Main) 2014]
(a) 21
(b) 18
(c) 42
(d) 70
Answer – (c) 42
সমাধান – তৃতীয় সংখ্যাটি 42। কারণ সংখ্যা তিনটির গসাগু 6 ও লসাগু 420।
Q. দুটি পরস্পর মৌলিক সংখ্যার গুণফল 117। এদের লসাগু হবে- [WBCS (Main) 2015, 2016]
(a) 4
(b) 117
(c) তাদের গসাগু-এর সমান
(d) গণনা করা যাবে না
Answer – (b) 117
সমাধান – দুটি পরস্পর মৌলিক সংখ্যার গসাগু 1।
লসাগু = সংখ্যা দুটির গুণফল/গসাগু = 117/1 = 117